দিল্লিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে স’হিংসতায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নি’হত হয়েছেন। দা’ঙ্গায় বেশ কিছু ম’সজিদ জ্বা’লিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন বহু মুসলিম।
দিল্লিতে চলমান সং’ঘর্ষ ও সাম্প্রদায়িক দা’ঙ্গার ভেতরে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশ থেকে নি’র্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সম্প্রতি তিনি নিজের ফেসবুক পেইজে একটি স্ট্যাটাসে তার মতামত প্রকাশ করেন। তার স্ট্যাটাস হুবহু তুলে দেয়া হলো-
২৭ বছর আগে লজ্জা লিখেছিলাম। উৎসর্গ করেছিলাম ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষকে। লিখেছিলাম, ‘ধর্মের অপর নাম আজ থেকে ম’নুষ্যত্ব হোক’। না, ২৭ বছরে ধর্মের অপর নাম ম’নুষ্যত্ব হয়নি। ধর্ম ধর্মই রয়ে গেছে, যে ধর্ম বিবর্তিত হয়ে এবং না- হয়ে আজ অনেকটাই ম’নুষ্যত্বহীন।
দিল্লিতে গত দুদিন যে দা’ঙ্গা হলো,মানুষ মরল, তা শুধু পাথরের আ’ঘাতে নয় কিন্তু; ব’ন্দুকের গু’লিতে, ছু’রির কোপেও। মানুষের বাড়িঘর পু’ড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দোকানপাটে আ’গুন জ্বা’লিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মানুষও আ’গুনে পু’ড়ে ম’রেছে। এরা গরিব। এদের একটিই পরিচয়, এরা গরিব। এদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। টুপি বা গেরুয়া পরা না থাকলে দা’ঙ্গাবাজদের দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই কে হিন্দু কে মুসলমান।
ওসব যদি পরা না থাকে তাহলে নাম না শুনলে বা কাপড় খুলে যৌ’নাঙ্গ না দেখলে কে বুঝবে কে কী। কারণ, দেখতে তো তারা এক। ত্বকের রঙ ,নাক চোখ মুখের গড়ন, পরনের কাপড়, মুখের ভাষা, এক । হিন্দুরাই তো এককালে ধর্ম বদলে মুসলমান হয়েছিল। চেহারা ভিন্ন হবে কী করে!
৩৪ জন মা’রা গেছে দা’ঙ্গায়। হাসপাতালে আ’হত অবস্থায় পড়ে আছে অনেক। এই দা’ঙ্গা শুরুতেই বন্ধ করার হয়তো উপায় ছিল। যে কোনও কারণেই হোক, বন্ধ করা হয়নি। আমরা জানি ধনী মুসলমানের গায়ে কোনও টোকা পর্যন্ত পড়বে না। ধনী হিন্দুর নাগাল কেউ পাবে না।
কেবল গরিব হিন্দু মুসলমানে হিং’সেহিংসি খু’নোখুনি হবে। আমরা অবাক হয়ে খু’নোখুনি দেখতে থাকবো। এক সময় আর অবাকও হবো না, শুধু দেখতে থাকবো।
বাংলাদেশে যখন হিন্দুর ওপর অ’ত্যাচার হয়, সহৃদয় কিছু মুসলমান হিন্দুদের নিজের নিরাপদ ঘরে আশ্রয় দেয়। দিল্লিতেও তেমন, কিছু মুসলমান হিন্দু পড়শির বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছে। মানুষ তো সব নষ্ট হয়ে যায়নি, তাই আশা জাগে, হয়তো ঘৃণাকে সরিয়ে ভালোবাসাই একদিন বড় জায়গাটা নেবে।