টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে মৃত ব্যক্তিদের কাগজে কলমে জীবিত দেখিয়ে তাদের নামে বছরের পর বছর ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি বয়স্ক ভাতা বাস্তবায়নের সব নীতিমালাকে উপেক্ষা করে ঘাটাইল ইউনিয়ন পরিষদে প্রণয়ন করা তালিকায় ২৮ মৃত ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে।
এছাড়া ভাতা গ্রহীতার কাছ থেকে অর্থ নেয়া, একই পরিবারে স্বামী-স্ত্রী ভাতা সুবিধা পাওয়া, অপেক্ষাকৃত কম বয়সী ব্যক্তিকে ভাতার কার্ড দেয়ার অভিযোগও উঠেছে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
উপজেলার ২নং ঘাটাইল ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে অনুসন্ধানের পর ইউনিয়ন পরিষদের প্রণয়নকৃত বয়স্কভাতা তালিকায় এমন সব দুর্নীতি ও অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় ওই ইউনিয়নের মোট বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৬৩৩ জন দেখানো হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই তালিকার ২১১ নম্বরে রয়েছে বিরাহিমপুর গ্রামের আজাহারের নাম। তিনি মারা গেছেন ৯ বছর আগে। ওই গ্রামের নার্গিছ বেওয়ার নাম রয়েছে তালিকার ১৯ নম্বরে। আর তিনি মারা গেছেন দুই বছর আগে। তারা মারা গেলেও তাদের নামে নিয়মিত উঠানো হচ্ছে ভাতার টাকা। কে নিচ্ছেন এ টাকা হিসাব মিলাতে পারছেন না মৃতের স্বজনরা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মৃত আজাহেরের ছেলে হাফেজ মনির হোসেন বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর ভাতার কার্ড কে নিয়ে গেছে আর এটি কোথায় আছে তার কিছুই আমরা জানি না। বাবার নামে এ টাকা ব্যাংক থেকে কে তোলেন তাও জানি না।’
একই গ্রামের নার্গিস বেওয়ার বোন খোদেজা বলেন, ‘আমার বোন মারা যাবার পর খলিল মেম্বার এসে কার্ড নিয়া যায়। তারপর আর কিছুই জানি না। এখন শুনি আমার মৃত বোনের নামে টাকা তোলা হচ্ছে।’
স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার খলিল বলেন, ‘আজাহের মারা গেছেন আমি মেম্বার হওয়ার আগেই। ওই কার্ডের বিষয়ে আমি কিছইু জানি না। তবে নার্গিস বেওয়ার কার্ড আমার কাছে আছে।’
তালিকার ৩১৫ নম্বরে রয়েছে শাহপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের নাম। তিনি মারা গেছেন ৪ বছর আগে। একই গ্রামের ২১৯ নম্বর তালিকায় থাকা আমিনা মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে।
মৃত আমিনার ছেলে জুলহাস বলেন, ‘মা যে বয়স্ক ভাতা পেতেন সেটাই জানি না আমি।’
অনুসন্ধানে আমিনার মতো তালিকায় নাম রয়েছে সখিনা, নবাব আলী, জয়গন বেওয়া, ছাহেরা, আজিরন, জোয়াহের, নবিরন, হামিদ, মান্নান, মাজেদা, উদয় ভানু ও জমিলা খাতুনসহ আরও ২৬ জনের। যাদের কেউ বেঁচে নেই।
এমন তালিকার বিষয়ে ঘাটাইল ইউনিয়নে দীর্ঘদিন কারিগরি প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার বাসিন্দাদের মৃত্যু সনদ প্রদান করেন। তাদের হাত হয়েই ভাতাপ্রাপ্ত মৃত ব্যক্তির কার্ড আমাদের হাতে আসে। প্রতিস্থাপনের তালিকাও ওনারা দিয়ে থাকেন। এখানে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই।’
ঘাটাইল শাখার অগ্রণী ব্যাংক ম্যানেজার মো.শামছুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘যারা সশরীরে ভাতা বই নিয়ে উপস্থিত হয় আমরা তাদের ভাতা দিয়ে থাকি। আবার কেউ জীবিত আছে কিন্তু অসুস্থ। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান প্রত্যয়নপত্র দিলে আমরা সেই লোকের টাকা দিয়ে দিই।’
উপজেলা সমাজবেসা কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘যতক্ষণ চেয়ারম্যান আমাদের মৃত ব্যক্তির তথ্য ও বই ফেরত না দেবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি না।’
অভিযোগ বিষয়ে ঘাটাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দর আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত ব্যক্তিদের নামে বয়স্ক ভাতার টাকা ওঠানো হচ্ছে বলে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। এমন কিছু ঘটছে বলে আমি জানি না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার যুগান্তরকে বলেন, ‘এমন কিছু হয়ে থাকলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’