বেগম খালেদা জিয়া গত ২৫ মার্চ ৬ মাসের জামিনে মুক্ত হয়েছেন। শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্যে তাঁকে জামিন
দেওয়া হয়েছে এবং তিনি জামিনের শর্ত মেনেই রয়েছেন। প্রকাশ্য কোন কর্মকাণ্ডে তাঁকে দেখা যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক ব্যাপারে তিনি মোটামুটি এক প্রকার নির্লিপ্ততা অবলম্বন করছেন। তবে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে




যোগাযোগ এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি মতামত দিচ্ছেন। এই মতামত দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর পুত্র
তারেকের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে বলে বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।সংশ্লিষ্ট
সূত্রগুলো জানাচ্ছে যে, গত বুধবার খালেদা জিয়া টেলিফোনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম




আলমগীরকে জানান যে, স্থায়ী কমিটির একটি শূন্য পদে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির
রিজভীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্যে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি,
যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া দলের চেয়ারপারসন, তাই তাঁর নির্দেশনাই শিরোধার্য এবং দলের গঠনতন্ত্র




অনুযায়ী দলের স্থায়ী কমিটিতে তিনি যে কাউকে চাইলেই অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই নির্দেশনা পেয়ে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ
করেন এবং তারেক জিয়া এই ব্যাপারে আপত্তি প্রকাশ করেন। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, এরপর




তারেক লন্ডন থেকে তার মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও কথা বলেন এবং রুহুল কবির রিজভীকে স্থায়ী
কমিটির পদে না অন্তর্ভুক্ত করতে বলেন। এই নিয়ে মা-ছেলের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে এবং এই দ্বন্দ্বে এখন পর্যন্ত
তারেকই এগিয়ে আছেন।বিএনপিতে খালেদা-তারেকের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। ২০০৯ সালের পর থেকেই খালেদা জিয়া




এবং তারেক জিয়ার রাজনৈতিক মত এবং কৌশল দুই প্রান্তে অবস্থান করছে এবং দলে বেগম খালেদা জিয়ার
কর্তৃত্ব আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। এখন বিএনপির যে ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, অঙ্গ সংগঠন
যুবদলসহ সকল অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কর্তৃত্ব পুরোপুরি তারেকের হাতে এবং তাঁরা বেগম জিয়ার নির্দেশ-সিদ্ধান্ত




খুব একটা মানেন না। দলের কিছু প্রবীণ নেতারাই বেগম খালেদা জিয়ার অনুসারী এবং তাঁরা বেগম খালেদা
জিয়াকে নেতা মানেন। বাকি সবার কাছে তারেকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আর যার ফলে বিএনপি কোন বিষয়েই
সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্যে লন্ডনে যেতে চান




এবং সেখানে স্থায়ীভাবে থাকতে চান। কিন্তু তারেক মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে চলে আসলে
রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির মৃ’ত্যু হবে। এর আগে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়েও তারেক জিয়ার
সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব হয়েছিল। তারেক জিয়া চেয়েছিলেন যে, তাঁর মা কারাগারেই থাকুক।বেগম খালেদা জিয়া




কারাগারে থাকলে বিএনপি আরো শক্তিশালী হবে, সরকারবিরোধী মনোভাব আরো তীব্র হবে এবং আন্দোলন
করার সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু ২৫ মাসে তারেক জিয়ার তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আন্দোলন তো দূরে থাক
কোন প্রকার প্রতিবাদই গড়ে তুলতে পারেননি বিএনপির নেতৃবৃন্দ। পরে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার
তারেকের নির্দেশ উপেক্ষা করে সরকারের সঙ্গে আপোস করে জামিন করিয়ে নিয়েছেন।গত ২৫ মাসে বেগম
খালেদা জিয়া বাস্তবে একটি পুতুলে পরিণত হন এবং বিএনপির সকল ক্ষমতা দখল করেন তারেক জিয়া। মূল
সমস্যা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে প্রাপ্ত চাঁদাবাজির টাকা নিয়ে। বেগম খালেদা জিয়া জেল থেকে আসার




পরে যারা তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী তারা কিঞ্চিত পরিমাণ টাকা দিচ্ছেন। দলের মূল টাকা চলে যাচ্ছে লন্ডনে এবং সেই
টাকায় আয়েসি জীবনযাপন করছেন তারেক জিয়া। কারণ যারা অর্থ জোগান দেয় তাঁরা জানে যে, বিএনপির
মূল শক্তি এখন তারেক এবং বিএনপিকে খুব বেশি অর্থ সহায়তা দিয়ে লাভ নেই।
কিন্তু বিএনপির তৃণমূল, বিশেষ করে আপামর কর্মীদের মধ্যে তারেক জিয়ার কোন অবস্থান নেই। বরং তারেক
জিয়াকে একজন দূর্নীতিবাজ এবং অপরিপক্ক নেতা হিসেবে মনে করেন তৃণমূলের কর্মীরা। বিশেষ করে ২০১৮
সালের ৩০ শে ডিসেম্বরের পর তারেকের অবস্থান দলের ভেতরে অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেছে। আর অন্যদিকে বেগম




খালেদা জিয়া এখনো দলের নেতাদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন এবং আস্থাভাজন নেতা হিসেবে পরিচিত রয়েছেন।
কাজেই তারেক-খালেদার দ্বন্দ্ব বিএনপিকে নতুন সঙ্কটের মুখে ফেলেছে। দলের কর্মীদের কাছে তারেকের কোন
গ্রহণযোগ্যতা নেই, কিন্তু বিএনপির ক্ষমতার চাবি তারেকের কাছে, আবার কর্মীদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় বেগম
খালেদা জিয়ার কথা শোনেন না দলের নেতারা। এই বাস্তবতার স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে রুহুল
কবির রিজভীকে স্থায়ী কমিটিতে নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে শেষ
পর্যন্ত বিএনপির পরিস্থিতি কি হবে সেটাই দেখার বিষয়। সূত্র : jagonews24



