



অনলাইনে পরিচয়, এরপর প্রে’মের প্রস্তাব। সেটি প্রত্যাখান করতেই কি’শোর ছে’লে-মে’য়ের ‘গ্যাং’ চড়াও হল
মে’য়েটির ঘরে। শিক্ষা দিতে’ মা’রধরের সেই ঘটনা আবার ছাড়া হল ফেসবুকেও। এখন চলছে হু’মকি-পাল্টা
হু’মকি। মেসেঞ্জার ভরে যাচ্ছে ভা’র্চুয়াল ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায়।




কি’শোর গ্যাং কালচারের এমন ঘটনা দেখা গেল চট্টগ্রামের বন্দরটিলা এলাকার কসাই গলিতে। ঘটনা ঘটেছে গত
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট)। এক কি’শোরীকে কয়েকজন কি’শোর-কি’শোরী মা’রধর করছে— সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাই’রাল হওয়ার পর সেই ভিডিওর সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালানোর




পর জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর বন্দরটিলা এলাকার কসাই গলিতে প্রকাশেই ঘটেছে
এই ঘটনা। জানা গেছে, অনলাইনে কি’শোর গ্যাং কালচারের বিরোধের জের ধরে অধ’রা আহমেদ (২২) নামের
এক তরুণীকে তার বাসায় ঢুকে বেধড়ক মা’রধর করেছে পাঁচ কি’শোর-কি’শোরীর একটি দল। মা’রধর ছাড়াও তার




ওই তরুণীর বুকের দিক থেকে জামা টেনে ছিঁড়ে ফেলে। পরে হা’মলাকারী ওই দলটিই ‘শিক্ষা দিতে’ মা’রধরের
ঘটনা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাই’রাল করে। কি’শোর গ্যাংয়ের হা’মলার শিকার অধ’রা
আহমেদ জানিয়েছেন, অনলাইনে পরিচয়ের পর শাখাওয়াত নামের এক কি’শোরের প্রে’মের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যা




এবং ওই কি’শোরের অ’নৈতিক বিভিন্ন প্রস্তাবের প্রতিবাদ করায় বন্ধুবান্ধব নিয়ে এভাবে তার বাড়ি গিয়ে হা’মলা
করা হয়েছে। শাখাওয়াত ছাড়া হা’মলায় অংশ নেওয়া বাকি চারজন হলেন শাখাওয়াতের দুই বন্ধু শাওন (২২) ও
আরেফিন (২২) এবং দুই বান্ধবী সিম’রান সিমি (১৮) ও তানিয়া (১৭)।




হা’মলার শিকার অধ’রা আহমেদ বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে আমা’র এক বন্ধুর মাধ্যমে শাখাওয়াতের সঙ্গে
পরিচয় হয় আমা’র। কিছুদিন পরই সে আমাকে প্রে’মের প্রস্তাব দেয়। আমি নাকচ করে দিলে বিভিন্ন সময়ে সে
আমাকে অশ্লীল এসএমএস দিতো। এসবের প্রতিবাদ করায় সে তার বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে আমা’র ছবি




দিয়ে যা তা লিখতে শুরু করে। এসব নিয়ে তার সাথে আমা’র অনলাইনে ঝগড়া হয়েছে। এর জের ধরে সে
আমা’র বাড়িতে এসে হা’মলা চালাবে ভাবতেও পারিনি আমি।’ অধ’রা আহমেদ জানান, তার গ্রামের বাড়ি খুলনা
বাগেরহাটে। ৬ বছর আগে পিতা মা’রা গেছেন। এক ভাই ও মাকে নিয়ে এই বাসায় ভাড়া থাকেন তারা। পাশেই বড়




বোনের বাসা। ঘটনার সময় তার ভাই গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। আর মা ছিলেন বাইরে। ওই সময় ঘরে একাই
ছিলেন অধ’রা। ঘটনার বিবরণ দিয়ে অধ’রা বলেন, ‘হঠাৎ করে শাখাওয়াত কল করে তাকে নিচে নামতে বলেন।
তিনি নিচে না যাওয়ায় তারাই দুই তলার ওপর উঠে আসে। এ সময় সিমি প্রথমে তাকে মা’রধর শুরু করে। পরে
শাখাওয়াতসহ অন্যরাও হা’মলায় অংশ নেয়।’ অধ’রা অ’ভিযোগ করেন, ‘তারা ৫ জন মিলে আমা’র বাসায় এসে
আমাকে মা’রধর করলো, আবার তারাই সেটার ভিডিও করে অনলাইনে ছড়িয়ে দিল। শাখাওয়াত ও সিমি দুজনে
আমা’র বুকের দিক থেকে জামা টেনে ছিঁড়ে ফেলে। শাখাওয়াতের সাথে আমা’র ঝগড়া হয়েছিল। কিন্তু সিমির
সাথে তো কিছুই ছিল না। আর আমা’র যদি কোন অ’প’রাধ থেকেও থাকতো তাহলে তারা আমা’র বাসায়
এসেছে আমা’র আত্মীয়স্বজনদের জানাতে পারতো।’ জানা গেছে, কি’শোরীকে মা’রধরের ঘটনায় অ’ভিযু’ক্ত
শাখাওয়াত ইস’লামের বাসা আগ্রাবাদ কমা’র্স কলেজ এলাকার মিয়া বাড়িতে। তিনি জনৈক রফিকের সন্তান।




তিনি ছাড়াও এ ঘটনায় অংশ নেওয়া অন্য দুই কি’শোরীর একজন তানিয়া। তানিয়া পড়াশোনা করে নগরীর
বন্দরটিলা সিটি করপোরেশন কলেজে। অন্যজন সিম’রান সিমি নামের অ’পর কি’শোরীর বাসা নগরীর সিমেন্ট
ক্রসিং এলাকায়। হা’মলায় অংশ নেওয়া দুই কি’শোর শাওন ও আরেফিনের নাম জানা গেলেও তাদের বিস্তারিত
পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।




থা’নায় গেলেও অ’ভিযোগ নেয়নি পু’লিশ এদিকে হা’মলার পরপরই থা’নায় অ’ভিযোগ দায়ের করতে গেলেও
আ’সামিদের ঠিকানা না থাকার অজুহাতে অধ’রার অ’ভিযোগ গ্রহণ করেনি ইপিজেড থা’না পু’লিশ।
এই বিষয়ে অধ’রা আহমেদ বলেন, ‘আমি সাথে সাথেই থা’নায় গেছি। কিন্তু থা’না থেকে আমাকে বলা হলো




ঠিকানা ছাড়া কোন অ’ভিযোগ নেওয়া হবে না। আমি পু’লিশকে বলেছি এদের কারও সাথে আমা’র তেমন
পরিচয় নেই। যে দুজনকে চিনি তাদের অনলাইনেই চিনি। তাদের একজনের বাসাও আমি চিনি। পু’লিশকে
বলেছি আমি ওই বাসা চিনিয়ে দেবো। তার কাছ থেকে নিশ্চয়ই বাকিদের বাসার ঠিকানা পাওয়া যাবে। কিন্তু
এরপরও পু’লিশ অ’ভিযোগ নেয়নি। উল্টো আমাকে বলেছে যেদিন তাদের ঠিকানা যোগাড় করতে পারবেন
সেদিন আসবেন।’ এই বিষয়ে ইপিজেড থা’নার ভা’রপ্রাপ্ত কর্মক’র্তা উৎপল বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি
বলেন, ‘এই ধরনের কোনো ঘটনা স’ম্পর্কে আমি জানি না। তাছাড়া থা’নায় কেউ এলে অ’ভিযোগ না নিয়ে




ফিরিয়ে দেওয়া হবে— এটা অসম্ভব। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’ এর ঘন্টাখানেক পরেই ওসি উৎপল বড়ুয়া
জানান, ‘খোঁজ নিয়ে ওই কি’শোরীর বাসায় একটি টিম পাঠিয়েছি আমি। তবে তিনি খুব একটা সহযোগিতা করছেন
না। কারোর নাম ঠিকানা দিতে পারছেন না। আমাদের যে অফিসার সেখানে গেছে তাকে তিনি বলেছেন এগুলো




আপনারা খুঁজে বের করেন। আম’রা ঘটনা নিজেদের মত করে ত’দন্ত করছি।’ সিমির বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ ছিল
আগেও এদিকে বাড়িতে হা’মলার পর আরও একটি ভিডিও নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট করেন অধ’রা।
সেখানে অন্য একটি মে’য়েকে ধাক্কাধাক্কি ও বকাঝকা করতে দেখা যায় সিমিকে। শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়। প্রায়ই
বিভিন্ন ইস্যুতে সিমির হাতে এভাবে অনেক মে’য়েকে নি’র্যাতন নিগ্রহের শিকার হতে হয় বলে অ’ভিযোগ অধ’রার।
এদিকে হা’মলার বিষয়ে অনলাইনে প্রতিবাদমুখর হওয়ার পর এই সংক্রান্ত পোস্টগুলো সরিয়ে নিতে তাকে টাকা
দেওয়ার প্রস্তাব এবং পরে হু’মকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান অধ’রা।




তিনি বলেন, ‘আমাকে পোস্টগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। আমি রাজি না হওয়ায়
তারা আবারও হু’মকিধামকি দিচ্ছে। একবার তারা যেভাবে বাড়িতে এসে হা’মলা করে গেল, তাতে আমি আবার
হা’মলার আশ’ঙ্কা করছি।’ এসব অ’ভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দিনভর চেষ্টা করেও সিম’রান সিমি
কিংবা শাখাওয়াত কারোর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। দুজনের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে কল
দেওয়া হলেও নম্বর দুটি বন্ধ পাওয়া গেছে। সুত্র: চট্টগ্রাম প্রতিদিন



