



জুমা’র দিনের অন্যতম আমল হলো সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা। এটি কুরআনুল কারিমের ১৮তম সুরা।
আয়াতসংখ্যা ১১০। ‘কাহফ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পাহাড়ি গুহা। সুরাটিতে ‘আসহাবে কাহফ’ তথা ওই সব মুমিন যুবক,
পূর্বকালে যারা নিজেদের দীন-ঈ’মানকে হেফাযতের জন্য কোনো এক পাহাড়ের গুহায় আত্মগো’পন করেছিল,




তাদের ঘটনাটি আলোচনা হয়েছে বিধায় এর নামকরণ করা হয়েছে ‘সুরা কাহফ’। এই সুরায় সূক্ষ্ম চারটি ফিতনার
(‘ফিতনা’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ নৈরাজ্য, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অন্তর্ঘাত, চক্রান্ত, বিপর্যয়, নৈরাজ্য,
অমানবিকতা প্রভৃতি।) কথাও বর্ণিত হয়ছে। ফিতনা চারটি হলো—এক. দ্বিনের ফিতনা অর্থাৎ কাহফ বা




গুহাবাসীর ঘটনা। দুই. সম্পদের ফিতনা। এটি হলো, দুই উদ্যানের মালিকের ঘটনা। তিন. ইলম বা
জ্ঞানকেন্দ্রিক ফিতনা, অর্থাৎ খিজিরের সঙ্গে মু’সা (আ.)-এর ঘটনা। চার. রাজত্বের ফিতনা। এর দ্বারা
জুলকারনাইনের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই চার ফিতনাই দাজ্জালের মধ্যে পাওয়া যাবে।




যে ব্যক্তি পবিত্র জুমা’র দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, মহান আল্লাহ তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা
করবেন। সুরা কাহফ তিলাওয়াতে হাদিস শরিফে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ফজিলত বর্ণিত আছে—এক. রহমত ও
প্রশান্তি বর্ষণ। জনৈক সাহাবি নিজ ঘরে বসে পবিত্র কোরআনে কারিম




তিলাওয়াত করছিলেন, এদিকে ঘরের মধ্যে তাঁর একটি পোষা প্রা’ণী লাফা’লাফি করছিল। তখন তিনি আল্লাহর
দিকে মনোযোগী হয়ে প্রা’ণীটির থেকে স্বস্তি পাওয়ার দোয়া করলেন। হঠাৎ আকাশ থেকে বৃষ্টি শুরু হলো।
লোকটি ঘটনাটি আল্লাহর রাসুলের কাছে বর্ণনা করলেন। রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, কোরআন পাঠ রহমত




বর্ষণের কারণ। অর্থাৎ হঠাৎ মেঘ থেকে বৃষ্টি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও প্রশান্তি। এ সময় আসমান
থেকে ফেরেশতারা নেমে আসেন। এটি দেখেই প্রা’ণীটি ছোটাছুটি করছিল। ই’মাম মু’সলিম (রহ.) এই ঘটনার
সত্যতা যাচাইয়ে তাঁর সহিহ মু’সলিম শরিফে স্বতন্ত্র বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।




দুই. কিয়ামতের দিন নূর (জ্যোতি) প্রাপ্ত হওয়া। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহফ তিলাওয়াত করবে,
কিয়ামতের দিন তা তার জন্য নূর হবে। তিন. দাজ্জাল থেকে মুক্তি। দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড়।
প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ উম্মতকে দাজ্জাল থেকে সতর্ক করেছেন।




এই ফজিলত অর্জন করতে সম্পূর্ণ সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা জরুরি কি না, এ বিষয়ে একাধিক বর্ণনা এসেছে।
এ বিষয়ে মূলকথা হলো, সম্ভব হলে জুমা’র দিন পুরো সুরা কাহফ তিলাওয়াত করবে; অন্যথায় সুরা কাহফের
প্রথম ১০ আয়াত তিলাওয়াত করবে। তাফসিরের কিতাবাদিতে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, পুরো সুরাটি




একসাথে নাযিল হয়েছে এবং নাযিলের সময় সত্তর হাজার ফেরেশতা জিবরিল আমিনের সাথে এসেছিলেন।
হাদিসে এই সুরাটির অনেক ফযিলত এসেছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফ যথাযথভাবে তিলাওয়াত করবে, এটি তার জন্য কিয়ামতের দিন নুর (আলো) হবে।
[বাইহাকি, শুয়াবুল ঈ’মান, হাদিস নং: ২২২১] বারা ইবনু আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাতে সুরা কাহফ
তিলাওয়াত করছিলেন। তার কাছে রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁ’ধা ছিল। এরই মধ্যে একটি মেঘখণ্ড এসে তাকে ঘিরে
ফেলে। এরপর যখন মেঘখণ্ডটি তার খুব কাছে চলে আসছিল, তখন তার ঘোড়াটি ছোটাছুটি করতে লাগল। সকালে




ওই ব্যক্তি রাসুলের কাছে এসে রাতের ঘটনা জানাল। তিনি বললেন, ওটা ছিল ‘সাকিনাহ’ (আল্লাহর পক্ষ থেকে
বিশেষ রহমত), যা কুরআন তিলাওয়াতের বরকতে নাযিল হয়েছিল। [বুখারি, আসসাহিহ : ৫০১১; মু’সলিম,
আসসাহিহ : ৭৯৫] নাওয়াস ইবনু সাময়ান (রা.) থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে




যে ব্যক্তি দাজ্জালকে পাবে, সে যেন সুরা কাহফের শুরুর অংশ পাঠ করে।’ [মু’সলিম, আসসাহিহ : ২৯৩৭]
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুময়ার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত
করবে, পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এটি তার জন্য নুর (আলো) হবে।’ [আলবানি, সাহিহ আলজামি : ৬৪৭০]







