ফেসবুকে এক ব’ন্ধুকে দেখলাম লি’খেছেন, ‘মন চায় তোরে চুমা দেই।’ অনেকে কমেন্ট করে জানতে চেয়েছেন, কাকে? কে সেই ভাগ্যবান? কেউ লাইক দিয়েছেন আবার কেউ অ’বাক হওয়ার ইমোজি ব্যবহার ক’রেছেন।




আম’রা সামাজিকমাধ্যমে যেমন ভালো কিছু দেখি/পাই তেমনি অর্থহীন, অপ্রয়োজনীয়, রুচিহীন, সমাজ বিবর্জিত স্ট্যাটাস-পোস্ট হরহামেশাই দে’খতে পাই। অনেক সময় ভালো লাগে আবার বির’ক্তও হই। অন্যের বির’ক্তিরও




কারণ হাই। তবে শুধু বির’ক্তির কারণ না, অনেক ক্ষেত্রে আম’রা সামাজিকমাধ্যমকে অসামাজিক করে তুলছি। এতে নিজেই ক্ষ’তির মুখে পড়ছি। কিভাবে? সমাজ বলতে আম’রা বুঝি এমন এক পরিবেশ সেখানে, পরিবার,




ব’ন্ধুমহল, শিক্ষক, জুনিয়র, সিনিয়র, অফিসের কলিগ, বস, চাকরিদাতা, চাকরিপ্রার্থী, নারী, পুরুষ, শি’শু বা অনুরূপ সব ধ’রণের মানুষ থাকে। সামাজিকমাধ্যম বলতে আম’রা এই বাস্তব সমাজটাকেই ভার্চুয়ালি উপস্থাপন করছি। আমা’র সামাজিকমাধ্যমে উপরের সব ধ’রণের মানুষজন আছেন এবং এটি প্রায় সবারই।




এবার ভাবুন, আপনার বান্ধবীকে আপনার চুমা দিতে ইচ্ছে হয়েছে, সেটি কি আপনি আপনার মায়ের সামনে, শিক্ষকের সামনে, অফিসের বসের সামনে বা অনুরূপদের সামনে বলবেন? না। তাহলে এই যে ফেসবুকে লিখলেন




তারা কিন্তু সবাই দেখলো। এতে আপনার ব্য’ক্তিত্ব ন’ষ্ট হচ্ছে। কারণ, অ’ন্তত এটুকু তারা ভাবতেই পারে যে, এই ছেলে/মেয়ে নিজে’র প্রাইভেসি বোঝে না। যে নিজে’র প্রাইভেসি বোঝে না সে অন্যেরটা বুঝবে কী করে? আপনার বস ভাববে, ছেলেটা/মেয়েটা ইম্যাচিউরড। কোথায় কী বলতে হয় বোঝে না। অর্থাৎ এটি আপনার চাকরিতে




নেতিবাচক প্র’ভাব পড়তে পারে। আপনি এমন কোনো পোশাক পরলেন বা স্ত্রী/বান্ধবীর স’ঙ্গে এমন কোনো ছবি তুললেন সেটা আপনি এই সমাজে সবার সামনে ক’রতে পারবেন না। কিন্তু সেটি শেয়ার করে দিলেন। মুহূ’র্তেই তা সবাই দেখলো। এতে অন্যরা আপনার জ্ঞান/মা’নসিক উচ্চতা/আপনার ক্যাটাগরি পরিমাপ করবে। হয়তো কেউ




আপনাকে কিছু বলবে না। কিন্তু আপনার স’স্পর্কে তার ধারণা তৈরি হবে। কয়েক দিন আগে এক ছেলে বললো, ‘ভাই আমা’র চাকরি হয়েছিল কিন্তু নিয়োগপত্র দিল না। বলেছে, ফেসবুকে আপনার কার্যক্রম আমাদের পছন্দ হয়নি। দুঃখিত।’ শুধু এই একটি ঘ’টনাই না, এখন অনেক ক্ষেত্রে আপনার-আমা’র আচার-ব্যবহার, রুচি, চিন্তা,




জ্ঞান সব কিছুই দেখা হচ্ছে সামাজিকমাধ্যমে কার্যক্রম যাচাই করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক উন্নত দেশে এখন ভিসার আবেদন করলে সামাজিকমাধ্যমের লিঙ্ক দেয়া ম্যান্ডেটরি। আর তারা সেটা অবশ্যই চেক করে। তাহলে বুঝুন ব্যাপারটি আ’সলে কী?




বর্তমানে সামাজিকমাধ্যমে কার্যক্রম দেখে অনেককে অনেক প্রতিষ্ঠান চাকরির অফর দেয়। এটি আমা’র ক্ষেত্রে ঘ’টেছে। আমাকে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছিল, আপনি কাজ করবেন কিনা? আমি রাজি হই ও দেড় বছর চাকরি করি। সেই ক্যারিয়ার ব্যাকগ্রাউন্ড আমা’র পরবর্তীতে খুব উপকারে এসেছে।
অনেক সময় দেখা যায়, আম’রা সুস্বাদু বা দামী খাবার খাওয়ার ছবি দিচ্ছি। স্বাদও বর্ণনা করছি। কিন্তু আপনি ভাবুন, আপনার সমাজে বহু মানুষ আছেন যাদের ওই খাবারটা খাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাদের সামনে এটি এভাবে উপস্থাপন করলে তাদেরও খেতে মন চাইতে পারে। এমন বিষয় একেবারেই সিলি হলেও গু’রুত্ব দেয়া দরকার।




আবার আপনার ব’ন্ধু তালিকায় অনেক ব্যস্ত মানুষ আছেন। বড় বড় ক’র্মকর্তারা আছেন। শিক্ষিত-পন্ডিত মানুষজন আছেন। যারা হয়তো দিনের একটি সময় ঢু-মা’রে কী হচ্ছে দেখার জন্য। কিন্তু ঢুকেই তার চোখে পড়লো, ‘মন চায় তোরে চুমা দেই।’ বা আপনার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধ’রার ছবি বা আপনার খাওন-দাওনের দৃ’শ্য। তাহলে তিনি বির’ক্ত




হবেন কিনা? আপনার স’স্পর্কে তার কেমন ধারণা তৈরি হবে। আম’রা যদি অন্যের বির’ক্তির কারণ হওয়া বা খাবার-দাবারের মতো ছোট বিষয়গুলো বাদ দেই তবুও একটি বিষয় আমাদের খেয়াল রাখা দরকার যে, সবাই নিজে’র ক্যারিয়ার সাজাতে চাই। আর ক্যারিয়ার সাজানোর জন্য আমাদের সমাজে’রই নানা মানুষের স’ঙ্গে চলতে হয়, কাজ
ক’রতে হয়, ভাইভা দিতে হয়, অফিস ক’রতে হয়। তবে আপনার-আমা’র ক্যারিয়ারে যারা সহায়তা ক’রতে পারে, করে, সুযোগ তৈরি করে তারা বলা যায় সবাই আপনার-আমা’র চেয়ে ভালো পজিশনে, দক্ষ, জ্ঞানী, অভিজ্ঞ, ব্যস্ত। তো, যদি অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয়, ভুল, সমাজবিবর্জীত বা ইম্যাচিউরড কোনো একটি স্ট্যাটাসের কারণে আমা’র




স’স্পর্কে তার মনে হয় যে, ছেলেটা/মেয়েটা ইম্যাচিউড, পার্সোনালিটিলেস, মূর্খ, অদক্ষ, বেয়াদব বা এমন কোনো একটি তাহলে তিনি কি আপনার জন্য কিছু করবেন? আপনার জন্য একজন করবেন তখনই যখন আপনাকে দক্ষ, ম্যাচিউরড, ভদ্র বা এমন মনে হবে। না হলে আপনাকে রেফারও করবে না। কারণ, তার ভ’য়/শ’ঙ্কা/সন্দে’হ হবে যে,




পরে তার ইজ্জত না যায়। তবে আপনি অনেক ভালো স্ট্যাটাস দিলেন কিন্তু আপনার ভাষা ও শব্দচয়ন বেশ গু’রুত্ব পূর্ণ। এতে দক্ষ’তা প্র’কাশ। আবার আপনার ওয়ালে চুপ থাকলেন বা ভালো কার্যক্রম করলেন কিন্তু অন্যের ওয়ালে গিয়ে কমেন্ট করলেন বাজেভাবে এবং শব্দচয়ন আপ’ত্তিকর। সেটিও যে শুধু ওই ব্য’ক্তিই দেখবে এমন ভাবার কারণ নেই।
সুতরাং সামাজিকমাধ্যমে একটি পোস্ট দেয়া বা কমেন্ট করার আগে জাস্ট ভাবা দরকার, এটি আ’সলে কোনো দরকার আছে কিনা, কেউ বির’ক্ত হবে কিনা, অরুচিকর কিনা, লোকে বোকা বলবে কিনা? এবং লেখার ভাষাটা কতটা ভদ্র বা শালীন? ঠিক অন্যদের কোনো স্ট্যাটাস বা পোস্ট আপনার ভালো লাগে না লক্ষ্য রাখু’ন। নিজেই সেই ধ’রণের স্ট্যাটাস/পোস্ট থেকে বিরত থাকুন।




আম’রা চাইলেই নিজে’র কথা, যোগ্যতা, দক্ষ’তা একজনের সামনে গিয়ে প্র’কাশ ক’রতে পারি না। তবে সেখানে সিভি পৌছতে পারি। সিভি দেখে তারা বোঝেন। কিন্তু এখন সিভির চেয়ে গু’রুত্ব পূর্ণ সামাজিকমাধ্যমের কার্যক্রম।




এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে আপনি আপনার যোগ্যতা, দক্ষ’তা, মেধা উপস্থাপন ক’রতে পারেন। সুতরাং সামাজিকমাধ্যমকে অসামাজিক না বানিয়ে একটি নিজে’র সিভির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করলে লাভ হতে পারে।







