তোর টাকা দিয়ে কি আমরা মাছ মাংস খাবো? না তোর টাকায় চাকরি করি? যা তুই নিয়ে যা তোর মেয়েকে। দেখবো তুই কোথায় পড়ালেখা করাস।’ এই হচ্ছে শিক্ষকদের ভাষা।শিশুটি অঝোরে কাঁদছে। তার চোখের জল কিছুতেই




থামানো যাচ্ছে না। এই অবুঝ শিশুর অ”পরাধ, বনভোজনের নির্ধারিত ২৫০ টাকার মধ্যে মাত্র ৫০ টাকা কম দিয়েছিলেন তার পিতা। আর এ কারণেই তার কাছ থেকে পাঠ্যবই ছিনিয়ে নিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।




শিশুটির নাম কাজলী রানী রায়, নীলফামারীর জলডাকা উপজেলার গাবরোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী সে। গত ২৯শে জানুয়ারি ঐ বিদ্যালয়ের বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়। যার জন্য নির্ধারণ করা হয়




২৫০ টাকা।তন্মোধ্যে ২০০ টাকা দেন কাজলীর হতদরিদ্রে পিতা। ৫০ টাকা কম দেয়ায় শিশুটির কাছ থেকে পাঠ্যবই ফেরত নিয়ে স্কুল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। সাথে অকথ্য ভাষায় অপমান করা হয়েছে শিশুটির




বাবাকেও। অপমান সইতে না পেরে সন্তানকে ঐ স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন এই অসহায় পিতা।যে চোখে থাকবে শিক্ষার আলো, সেখানে কেন চোখের জল?‘তোর টাকা দিয়ে কি আমরা মাছ মাংস খাবো? না তোর টাকায়




চাকরি করি? যা তুই নিয়ে যা তোর মেয়েকে। দেখবো তুই কোথায় পড়ালেখা করাস।’ এই হচ্ছে শিক্ষকদের ভাষা। জবাবে কাজলীর পিতা বলেছিলেন,‘স্যার, আমি তো সুস্থভাবে আপনাকে বললাম যে আমি গরীব মানুষ। আমার পক্ষে ২০০ টাকার বেশি দেয়া সম্ভব না। এতে যদি পিকনিক খাওয়া না হয় তবে গরীবের মানুষের ছাওয়ালের তো




এমনিতেও লেখাপড়া হয় না।’আমাদের দেশের সাধারণ মানুষেরা, বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যারা থাকেন তারা খুবই সাধারণ জীবনযাপন করে থাকেন। দিনমজুর পিতাদের পক্ষে যেখানে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে যায়, সেখানে সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাপারটি আসলেই ব্যয়বহুল কিংবা বিলাসিতা তাদের জন্য। সঙ্গত কারণেই




শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে।এক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি এনজিও স্কুলগুলোর বিকল্প নেই। এবং প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় বনভোজন কিন্তু কোনো বাধ্যতামূলক বিষয় নয়। এদিকে অভিযোগের প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেয়ার দায়সারা আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের




শিক্ষামুখী করার জন্য সরকার কিছু বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অবৈতনিক, শিক্ষা ভাতা থেকে শুরু করে শিক্ষকদের বেতন সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। সরকার থেকে কোমলমতি শিশুদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত চলছে। এভাবে হতদরিদ্র পরিবারের শিশুদেরকে টাকার জন্য অপমান করা শুধু দুঃখজনকই নয় বরং




গুরুত্বর অপরাধও বটে।এমনিতেই এই মানুষগুলো সুবিধাবঞ্চিত, তার ওপর শিক্ষকদের এমন দূর্ব্যাবহার কিন্তু তাদেরকে শিক্ষাবিমুখ করে তুলবে। এমন আচরণের যথাযথ বিচার এবং প্রতিকার হওয়া উচিত। মানুষ গড়ার কারিগরেরাই যখন অমানুষের মতো আচরণ করেন সেক্ষেত্রে মানবতার প্রতি বিশ্বাস ধরে রাখা খুবই কষ্টকর হয়ে




যায়।কিছুদিন আগেও মৌলভীবাজারের একটি শিশুকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো হরিজন সম্প্রদায়ের হওয়ায়। সেখানেও একই কাজ করেছিলেন স্কুল শিক্ষকেরা। ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না, এদেশে জন্মানো পাপ নাকি গরীব হয়ে জন্মানোটাই বেশি পাপের?







